গরমের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ডায়রিয়া। ঢাকায় যা বেশ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সাধারণত প্রতি বছর এপ্রিল বা মে মাসের দিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। তবে এবারে তা সময়ের আগেই শুরু হয়েছে।
শুধু কলেরা হাসপাতাল বা আইসিডিডিআর’বিতে প্রতিদিন শত শত রোগী ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার রোগী, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি ব্যক্তিই আক্রান্ত হচ্ছেন।
কেন ডায়রিয়া হয় : ডায়রিয়া খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়ার জীবাণু খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া হতে পারে। দূষিত পানি পান করা; মলত্যাগের পর খাবার আগে কিংবা খাবার তৈরির আগে সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া; যেখানে সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ; বাসি-পচা খাবার খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন ডায়রিয়ার কারণ।
আবার বর্তমানে বেশির ভাগ শহুরে লোক বাইরের খাবারে অভ্যস্ত। এসব বাইরের খাবারে ব্যবহৃত পানি এবং খাদ্য উপাদান স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। গরমে খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া তীব্র গরমে পিপাসা মেটাতে প্রায়ই সাধারণ মানুষ রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ধরনের খোলা ঠাণ্ডা শরবত ও পানীয় খাবার, খোলা আইসক্রিম ও কাটা ফল কিনে খান যার অধিকাংশই স্বাস্থ্যসম্মত নয় এবং ডায়রিয়া জীবাণুর অন্যতম উৎস। এ ছাড়া শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে হলে দূষিত হয়, ফলে ওই লাইন দ্বারা সরবরাহকৃত এলাকার অনেক মানুষের ডায়রিয়া দেখা দেয়।
অধিকাংশ মানুষ যারা পানি ফুটিয়ে খান কিংবা ফিল্টার করে খান অর্থাৎ যারা বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যাপারে সচেতন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা খাবার আগে খাবারের পাত্র পরিষ্কার করার জন্য কিন্তু ট্যাপের পানিই ব্যবহার করেন। সুতরাং দেখা যায় বিশুদ্ধ পানি পান করলেও সেই ট্যাপের পানির মাধ্যমে খাবারের সঙ্গে শরীরে ডায়রিয়া জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। প্রধানত এসব কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
ডায়রিয়া হলে কী করবেন?
* ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর অন্তত ২০০ মি.লি. বা এক গ্লাসের মতো খাবার স্যালাইন পান করুন।
* ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তাই স্যালাইনের পাশাপাশি বার বার বেশি বেশি তরল খাবার যেমন: ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস (কমলা, মাল্টা, ডালিম কিংবা তরমুজের জুস), স্যুপ, টকদই, ঘোল, লবণ-গুড়ের শরবতসহ যেকোনো তরল খাবার ডায়রিয়া রোগীর জন্য ভালো।
* তরল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে (যদি রোগী বমি না করে)। বাড়ির কাজের লোক, । রেস্তোরাঁর রাঁধুনি কিংবা পরিবেশনকারী অর্থাৎ খাবার তৈরির সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের ডায়রিয়া দেখা গেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাদের কাজ বন্ধ রাখুন কিংবা ছুটির ব্যবস্থা করুন। একেবারেই যদি কাজ বন্ধ করা অসম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে তৈরির আগে এবং পরে খুব ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়া নিশ্চিত করুন।