কয়েক বছর আগে বা আমাদের শৈশবে গেম বলতে জানতাম ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, গোল্লাছুট এইসব। আর এখনকার গেম হচ্ছে ঘরে বা অন্ধকারে, জটলা বেঁধে রাস্তার ধারে মোবাইল-ল্যাপটপে উন্মাদনার সাথে ফ্রি ফায়ার ব্যাটলগ্রাউন্ডস বা ফ্রি ফায়ার, প্লেয়ার আননোওন’স ব্যাটলগ্রাউন্ডস বা পাবজি, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস ইত্যাকার খেলা। আগে তরুণরা অবসর কাটাতো বই পড়ে, মাঠে খেলে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে। কিন্ত ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের এই সময়ে তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইন গেমে। মাদকের চাইতে সর্বনাশা এ গেম।
মূলতঃ অনলাইন গেমে আসক্তি অন্যান্য নেশা জাত দ্রব্যের আসক্তির মতো। মস্তিষ্কের যে অংশে(রিওয়ার্ড সেন্টার) ইয়াবা বা গাঁজার মতো বস্তুর প্রতি আসক্তি জন্ম নেয়; ঠিক সেই জায়গায় অনলাইন গেমের প্রতি আসক্তি জন্মায়। এই আসক্তিকে সম্প্রতি ‘মানসিক রোগের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
অনলাইন গেমের অতিরিক্ত আসক্তিতে মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে দিনদিন। সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করার কারণে তরুণ-তরুণীরা নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকছে। মেধা বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এধরণের গেম খেলার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হাইকোর্ট সম্প্রতি কিছু অনলাইন গেম বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি দেশে অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্ত বিভিন্ন মাধ্যম, সার্ভারের সাহায্যে এখনো সচল রয়েছে গেম দুটি।
এ ভয়াবহ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তদুপরি, অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তরুণ-তরুণীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তাঁদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করতে হবে।
লেখক: ক্বারী হোসাইন আহমদ
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।